• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

প্রিয় মানুষকে দেখার অপেক্ষায় পরিবার

  • ''
  • প্রকাশিত ১৬ এপ্রিল ২০২৪

তরিকুল ইসলাম সুমন:

বহুমাত্রিক ব্যবস্থার মাধ্যমে সোমালীয় জলদস্যুদের কাছ থেকে মুক্ত এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক জাহাজ নিয়ে দুবাই হামরিয়াহ বন্দরের উদ্দেশে যাত্রা করেছে। ১৯-২০ এপ্রিল তারা কয়লা খালাসের জন্য দুবাই পৌঁছানোর কথা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ জলদস্যুদের কবলে পড়ার পর থেকেই জাহাজটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে চলছিল নানা আলোচনা-সমালোচনা। নানা আলোচনার পর দস্যুদের সঙ্গে সমঝোতা হয় জাহাজের মালিকপক্ষের। তবে তাদের মুক্তিতে মুক্তিপণ দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে নানা গুঞ্জন থাকলেও এ বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়নি মন্ত্রণালয় ও মালিক পক্ষ। মুক্তিপণ হিসেবে ৩টি ব্যাগে করে ডলার দেওয়া হয়েছে বলে বিভিন্ন তথ্য ও ছবি সোস্যাল মিডিয়ায় আসছে।

মুক্তিপণের বিষয়ে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর কাছে কোনো তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, জলদস্যুদের ওপর প্রচণ্ড চাপ ছিল। ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদ্ধারকারী জাহাজ ছিল তাদের থেকে দুই নটিকেল মাইল দূরে। একটা বহুমাত্রিক ব্যবস্থার মাধ্যমে এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিককে উদ্ধার করা হয়েছে। বহুমাত্রিক চাপের কারণে জলদস্যুরা নাবিকদের ছাড়তে বাধ্য হয়। আর কিছুদিন গেলে কী পরিণতি হতো, সেটা বুঝতে পেরেই জলদস্যুরা নাবিকদের ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এমভি আবদুল্লাহ ও ২৩ নাবিক এখন মুক্ত। নাবিকরা দুবাই পৌঁছাবের ১৯ এপ্রিল। জাহাজসহ নাবিকদের উদ্ধারে মালিকরা খুব ভালো ভূমিকা রেখেছে। তারা নতুন নাবিক দল রেডি করছে। তারা চাইলে ফেরত আসতে পারবেন।

নৌপ্রতিমন্ত্রী বলেন, ওই জাহাজে আমর্স গার্ড না থাকায় এমন ঘটনা ঘটেছে। জাহাজে আমর্স গাড আছে কি না এ বিষয়ে জানতে জলদস্যুদের সোর্স থাকতে পারে। সেই তথ্য নিয়েই জাহাজ আটক করে তারা। ২০২১ সাল পর্যন্ত ওই জাহাজে আমর্স গার্ড ছিল।

অপরদিকে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ও জিম্মি ২৩ নাবিকের মুক্তির খবরে শুকরিয়া আদায় করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নাবিকদের মুক্তির সংবাদটি যখন প্রধানমন্ত্রীকে দেই, তিনি শুকরিয়া আদায় করেন।

নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমোডর এম মাকসুদ আলম বলেন, বর্তমানে নাবিকরা জাহাজ নিয়ে ইউএইএর উদ্দেশে যাত্রা করেছে। তবে তারা করে দেশে ফিরবেন সেটি তিনি বলতে না পারলেও মালিকপক্ষের সঙ্গে চুক্তি শেষ অথবা নাবিকরা চাইলেই দেশে ফিরতে পারবেন। এক্ষেত্রে যখন তারা জাহাজ থেকে নেমে যাবেন তখন থেকেইতো তারা বেতন পাবেন না। এ কারণে চুক্তির মেয়াদ শেষ হলেও হয়তো দেশে ফিরবেন।

নৌ প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, এতো অল্প সময়ের মধ্যে এ ধরনের ঘটনা (জিম্মি থেকে উদ্ধার) ফায়সালা করা নজিরবিহীন। নববর্ষের প্রথম দিনে হয়েছে, আমরা আনন্দিত। শুধু তাদের আত্মীয়স্বজন নয়, পুরো দেশবাসী খুবই আনন্দিত। আমরা আমাদের নাবিকদের মুক্ত করতে পেরেছি। এ জন্য বিশ্ব মেরিটাইম সেক্টরে যারা যারা আছেন, সবাই যোগাযোগ রেখেছেন বিষয়টি ফায়সালা করার জন্য। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর ও আন্তর্জাতিক মেরিটাইম উইং তৎপর ছিল।

কেএসআরএমের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মেহেরুল করিম বলেন, আমি উদ্ধার প্রক্রিয়া হ্যান্ডেলিংয়ের জন্য জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে মনোনীত প্রতিনিধি। আমাদের সঙ্গে ওদের অ্যাগ্রিমেন্ট হয়েছে মুক্তিপণের বিষয়ে আলোচনা না করার জন্য। সেই অ্যাগ্রিমেন্ট অনুযায়ী আমি আপনাদের সঙ্গে কিছু শেয়ার করতে পারব না। কারণ এটা আমি সই করেছি। উদ্ধার প্রক্রিয়ায় আমরা আমেরিকান নিয়ম মেনেছি এবং ইউকে (যুক্তরাজ্য) ও সোমালিয়ার নিয়ম মেনেছি। ফাইনালি কেনিয়ার নিয়মও মেনেছি। সবার সঙ্গে আমাদের অ্যাগ্রিমেন্ট করা আছে এ বিষয়ে আলোচনা না করার জন্য। তবে আমি আবার বলি, আমরা সবকিছু আইন মেনে করেছি।

তবে এ বিষয়ে জানা গেছে, জলদস্যুদের দাবি অনুয়ায়ী মুক্তিপণ নিয়ে একটি উড়োজাহাজ বাংলাদেশ সময় শনিবার বিকেলে জিম্মি জাহাজের ওপর চক্কর দেয়। এসময় জাহাজের ওপরে ২৩ নাবিক অক্ষত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হয়। এরপর উড়োজাহাজ থেকে ডলারভর্তি ৩টি ব্যাগ সাগরে ফেলা হয়। স্পিডবোট দিয়ে এসব ব্যাগ জলদস্যুরা কুড়িয়ে নেয়। জাহাজে ওঠে দাবি অনুযায়ী মুক্তিপণ গুনে নেয় জলদস্যুরা। তবে চুক্তি অনুযায়ী জাহাজটি যথাসময়ে ছেড়ে দেয়নি দস্যুরা। পরে আশপাশে তাদের কাউকে আটক করা হয়েছে কি না সেটি নিশ্চিত হয়ে জাহাজটি থেকে দস্যুরা নেমে যায়।

কেএসআরএম গ্রুপের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান বলেন, একটা কথা বারবার আসছে, কেন আমরা আর্মড গার্ড নেইনি। এটার কারণ হচ্ছে আমরা হাই রিস্ক এলাকার বাইরে ছিলাম। সাধারণত ২০০ নটিক্যাল মাইলের ভেতর হাইরিস্ক এলাকা হিসাব করা হয়। কিন্তু আমরা যাচ্ছিলাম মোটামুটি ৬০০ নটিক্যাল মাইল দূরে দিয়ে। গত ৮-৯ বছরে ওই এলাকায় এরকম কোনো ঘটনা ঘটেনি, যেখানে আর্মড গার্ড নিতে হয়। এ কারণে আমরা আর্মড গার্ড নেইনি।

সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে ‘এমভি আব্দুল্লাহ’ জাহাজে জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হওয়ার বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে পরিবার ও স্বজনদের মুখে হাসি ফুটেছে। যেন আবারও নতুন করে ঈদের খুশি বইছে।

সোমালীয় জলদস্যুদের হাতে জিম্মি থাকা বাংলাদেশি এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের চিফ ইঞ্জিনিয়ার নওগাঁর সাইদুজ্জামান সাঈদের বাবা জানান, সোমালি জলদস্যুদের হাতে সাইদুজ্জামান সাঈদ আটকের খবরের পর থেকে দিনগুলো যেন বিভীষিকাময় কেটেছে। এর মধ্যে পবিত্র ঈদুল ফিতর চলে এলেও ঈদের খুশি ছিল না পরিবারে। ছেলের মুক্তির খবর শোনার পর আমাদের পরিবারে স্বস্তি এসেছে। আমাদের বুকের ওপর পাথর চাপ ছিল, সেটি নেমে গেছে। এই খবর শোনার পর ঈদের যে আনন্দ আমরা নতুন করে উপভোগ করছি।

সাইদুজ্জামান সাঈদের স্ত্রী মান্না তাহরিন বলেন, রোববার রাত সাড়ে ৩টার দিকে আমাদের ফোনে জানানো হয় মুক্তির খবরটি। পরে সকালে আমার স্বামীর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, জলদস্যুরা তাদের মুক্ত করে দিয়েছে এবং তারা চলে গেছেন। এখন ধীরে ধীরে সোমালিয়া উপকূল পার হয়ে দুবাইয়ের দিকে যাওয়া হবে। ২২ থেকে ২৩ তারিখ পর্যন্ত সময় লাগবে তাদের আসতে।

উল্লেখ্য, গত ১২ মার্চ দুপুরে কেএসআরএমের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজটি জিম্মি করে সোমালিয়ান দস্যুরা। সেখানে থাকা ২৩ নাবিককে একটি কেবিনে আটকে রাখা হয়। আটকের পর জাহাজটিকে সোমালিয়ার উপকূলে নিয়ে যাওয়া হয়। ৫৮ হাজার টন কয়লা নিয়ে ৪ মার্চ আফ্রিকার মোজাম্বিকের মাপুতো বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে এমভি আবদুল্লাহ। ১৯ মার্চ সেটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের হামরিয়াহ বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। এর আগেও ২০১০ সালে একই কোম্পানির জাহাজ এমভি জাহান মনি সোমালীয় জলদস্যুরা ছিনতাই করেছিল। ১০০ দিন পর ৪.৬১ মিলিয়ন ডলার মুক্তিপণ দিয়ে উদ্ধার করা হয়েছিল ২৬ জনকে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads